6/recent/ticker-posts

আজ আন্তর্জাতিক আল-কুদস দিবস


নিজস্ব সংবাদদাতা॥ 
রমযানের শেষ শুক্রবার (আজ) ০৮ জুন আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস। বায়তুল মুকাদ্দাস ইসলামের ১ম কিবলা এবং মক্কা মুআয্যামাহ ও মদিনা মুনাওয়ারার পরে তৃতীয় পবিত্র স্থান। হজরত রাসুলে কারিম সালালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার মসজিদুল হারাম, মদীনার মসজিদুন্নবী ও বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের উদ্দেশে সফরকে বিশেষভাবে সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যা অন্য কোন মসজিদ সম্পর্কে করেননি।
হিজরতের পর বায়তুল মুকাদ্দাস ইসলামের প্রথম কিবলা। বায়তুল মুকাদ্দাস দুনিয়ার জন্য অসংখ্য ভূখন্ডের মত কোন সাধারণ ভূখন্ড নয়। এ পবিত্র ঘর থেকেই খাতামুন্নাবীয়ীন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিরাজে গমন করেছিলেন।

বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদ এবং তার আশে-পাশের এলাকা বহু নবীগণের স্মৃতি বিজড়িত। এই পবিত্র নাম শুধু একটি স্থানের সাথে জড়িত নয় বরং এই নাম সকল মুসলমানের ঈমান ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এখানে রয়েছে অসংখ্য নবী-রাসূলের মাজার। ওহী ও ইসলামের অবতরণ স্থল এ নগরী নবীগণের দ্বীন প্রচারের কেন্দ্রভূমি। তাই এ পবিত্র নগরীর প্রতি ভালবাসা প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত।

হজরত ইবরাহীম (আ.) কা‘বা ঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর হজরত ইয়াকুব (আ.) জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। অতঃপর হজরত সুলায়মান (আ.) এই পবিত্র মসজিদের পুনঃনির্মাণ করেন। ৬৩৮ ঈসায়ী সালে দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) এর খিলাফতকালে পুরো বাইতুল মুকাদ্দাস এলাকা মুসলমানদের দখলে আসে। ১০৯৬ সালে খ্রিস্টান ক্রুসেডারগণ সমগ্র সিরিয়া ও ফিলিস্তিন দখল করে নেয়ার পর বাইতুল মুকাদ্দাস মসজিদের ব্যাপক পরিবর্তন করে একে গীর্জায় পরিণত করে। এরপর ১১৮৭ সালে মুসলিম বীর ও সিপাহসালার সুলতান সালাহ উদ্দীন আইয়ুবী জেরুজালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন। সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর হাতে পরাজিত হওয়ার পর খ্রীস্ট শক্তি পিছু হটলেও ইয়াহুদী চক্র বায়তুল মুকাদ্দাসের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি রাখে। তারা ফিলিস্তিন থেকে শুরু করে সুদূর মদীনা পর্যন্ত সারা মুসলিম এলাকা নিয়ে বৃহত্তর ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করে।

তারা তাদের খারাপ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য তুরস্কের তৎকালীন শাসক সুলতান আবদুল হামিদের নিটক ফিলিস্তিনে জমি কেনার অনুমতি চায় এবং এর বিনিময়ে তারা তুরস্কের সকল বিদেশী ঋণ পরিশোধ করে দেবে বলে অঙ্গীকার করে। সুলতান তাদের এ ষড়ন্ত্রমূলক প্রস্তাব মানেননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইয়াহুদীরা গোপনে জমি কিনতে থাকে। ১৯১৭ সালে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে ও ১৯২০ সালে সেখানে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং স্যার হার্বাট স্যামুয়েল নামক একজন ইয়াহুদীকে সেখানে বৃটিশ কমিশনার নিযুক্ত করে। ফলে জমি কেনায় বহিরাগত ইয়াহুদীদের জন্য ফিলিস্তিনের দুয়ার খুলে যায়। সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ইয়াহুদীবাদী উগ্র সংস্থাগুলোকে ফিলিস্তিনে বসবাস ও জমি কেনার জন্য কোটি কোটি ডলার প্রদান করে। ফলে অতি অল্প দিনের মধ্যে বহু সংখ্যক ইয়াহুদী ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। ইয়াহুদীদের সংখ্যা বাড়তে থাকার কারণে আরব মুসলমানদের সাথে দাঙ্গা-হাঙ্গামা প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়। অবশেষে বৃটিশ সরকার ফিলিস্তিনকে আরব ও ইয়াহুদীদের মধ্যে ভাগ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। যার ফলে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে যায়নবাদী অবৈধ ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভের পর ইয়াহুদীরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং মুসলানদের কচুকাটা করতে থাকে। তাদের অত্যাচারে জর্জরিত আরবরা জীবন বাঁচাতে দলে দলে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। এ সত্ত্বেও তখনও বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের দখলে ছিল। কিন্তু আরবদের দুর্বলতার মুখে ১৯৬৭ সালের আরব ইসরাঈল যুদ্ধের মাধ্যমেও তা উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। যায়নবাদী অবৈধ রাষ্ট্রের ধূর্ত ইহুদীরা পশ্চিমা প্রভুদের গোপন সহায়তায় তাদের ঘৃণ্য চক্তান্ত চালু রাখে এবং একের পর এক নিরীহ নিরস্ত্র মুসলমানদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে যেতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় জারজ ইসরাইলের বিমান হামলায় আজ গাজার অর্ধ সহ¯্রাধিক মুসলিম নারী শিশু বৃদ্ধ ও সাধারণ নাগরিক শহীদ হয়েছেন এবং হাজার হাজার আহত ও পঙ্গু হয়ে মরণযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।
কর্মসূচি আন্তর্জাতিক আল-কুদ্স দিবস (পবিত্র রমযানের শেষ শুক্রবার) উপলক্ষে আল-কুদ্স কমিটি বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে আজ ২২ রমযান, শুক্রবার, ০৮ জুন, ২০১৮, বিকাল ৩.৩০টায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মিলনায়তনে ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে আল কুদ্স দিবস উদযাপনের গুরুত্ব’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন।

Post a Comment

0 Comments