6/recent/ticker-posts

ভোলার তজুমদ্দিনে ‘সবুজ উপকূল’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত


ভোলা টুডে রিপোর্ট ॥ 
উপকূলের পড়ুয়াদের সবুজ সুরক্ষার আহবানের মধ্যদিয়ে মধ্য-উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার তজুমদ্দিনের শম্ভুপুরে সবুজ উপকূল ২০১৭’ কর্মসূচি হয়। এ উপলক্ষ্যে ২৬ সেপ্টেম্বর শম্ভুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। সকালে সবুজের আহবান নিয়ে বর্নিল শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে কর্মসূচির সূচনা ঘটে।

কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, রচনা লিখন, পত্র লিখন, ছবি আঁকা, সংবাদ লিখন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ, গাছের চারা রোপণ, দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এই কর্মসূচির আয়োজন করে উপকূল বিষয়ক সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান ‘উপকূল বাংলাদেশ’। উপকূলের পড়ুয়াদের মাঝে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানো, সৃজনশীল মেধার বিকাশ, লেখালেখি চর্চার মাধ্যমে তথ্যে প্রবেশাধিকারসহ জীবন দক্ষতা বাড়ানো এই কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য।


‘এসো সবুজের আহবানে, গড়ি সবুজ উপকূল’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শম্ভুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক দেওয়ান। সভাপতিত্ব করেন ভেন্যু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন হোসনে আরা চৌধুরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দিন সুমন, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. রাশেদুল হাসান, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ভোলা শাখার ব্যবস্থাপক মো. মনজুরুল আহসান, ব্যাংকের অফিসার মো. আবদুল গনি মিয়া, শম্ভুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাকসুদুর রহমান পাটোয়ারী, তজুমদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠণিক সম্পাদক নূরনবী নসু মিয়া, শম্ভুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল উদ্দিন, তজুমদ্দিন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম. নূরুন্নবী, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মামুন আহম্মেদ, শম্ভুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন প্রমূখ।

পরিবেশ সুরক্ষার আহবান জানিয়ে আলোচনা সভায় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তারা বলেন, শুধু পাঠ্য বইয়ের পড়া মুখস্ত করে পরিক্ষায় ভালো ফলাফল করলেই চলবে না। এর পাশাপাশি চারপাশের জগত সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। উপকূলের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। ভালো ফলাফলের সঙ্গে সাধারণ জ্ঞানের সংমিশ্রনই পারে মানুষের মত মানুুষ করে তুলতে। তোমাদেরকে ভালো মানুষ হয়ে প্রদীপের মত আলো জ¦ালাতে হবে, যাতে তোমার আলোতে আরও অনেকজন আলোকিত হতে পারে।

বক্তারা আরও বলেন, তোমার আগামী দিনে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন পদে দায়িত্ব পালন করবে। তোমাদেরকে পরিবেশ সচেতন হয়ে, তথ্য সমৃদ্ধ হয়ে, জীবন দক্ষতা নিয়ে বেড়ে উঠতে হবে। অনুষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য জীবনে কাজে লাগাতে হবে। উপকূলের সবুজ সুরক্ষার জন্য গাছের চারা রোপণ করতে হবে এবং বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

অনুষ্ঠান সূচনা ও উপস্থাপনায় ছিল দশম শ্রেণীর সুজিনা আক্তার ও মো. আফতাব। সূচনা বক্তব্য দেন সবুজ উপকূল ২০১৭ কর্মসূচির স্থানীয় সংগঠক ও সাংবাদিক শরীফ আল-আমীন। কর্মসূচির প্রেক্ষাপট ও উপকূলের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেন, সবুজ উপকূল ২০১৭ কর্মসূচির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ও আয়োজন প্রতিষ্ঠান উপকূল বাংলাদেশ-এর পরিচালক রফিকুল ইসলাম মন্টু। অনুষ্ঠানের শুরুতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. হাফিজ ইব্রাহিম।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সবুজ উপকূল ২০১৭ কর্মসূচির ব্যানার নিয়ে একটি শোভাযাত্রা বিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ খাসেরহাট বাজার ঘুরে অনুষ্ঠানস্থলে মিলিত হয়। বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।


কর্মসূচিতে সহ-আয়োজক হিসাবে থাকছে উপকূলের স্কুল পড়ুয়াদের সংগঠণ আলোকযাত্রা দল, আইটি পার্টনার হিসাবে থাকছে ডটসিলিকন, মিডিয়া পার্টনার হিসাবে থাকছে এটিএন বাংলা ও দৈনিক সমকাল।

এবার সাতক্ষীরার শ্যানগরের মুন্সীগঞ্জ, গাবুরা, খুলনার পাইকগাছা, বাগেরহাটের সদর ও শরণখোলা, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া, বরগুনার তালতলী, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা ও চরমোন্তাজ, ভোলার চরফ্যাসন ও তজুমদ্দিন, চাঁদপুরের হাইমচর, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়া, ফেনীর সোনাগাজী, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ এবং কক্সবাজারের টেকনাফ ও মহেশখালীতে কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এবার উপকূলের ১৪টি জেলার ১৯টি উপজেলার ২০টি স্থানে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। কর্মসূচিতে ১০০ স্কুলের প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেবে। এ নিয়ে তিন বছরে উপকূলের ২৫৬টি স্কুলে ১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী সবুজ উপকূল কর্মসূচির আওতায় আসছে। স্কুল শিক্ষার্থীরা পেয়েছে পরিবেশ সচেতনতার বার্তা, যা তাদের প্রাত্যহিক জীবনে কাজে লাগছে।

২০১৫ সাল থেকে সবুজ উপকূল কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। ২০১৫ সালে ১০টি জেলার ১৩টি উপজেলার ৪০টি স্কুলের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে যুক্ত হয়। পরের বছর ২০১৬ সালে ১৪টি জেলার ২৫টি উপজেলার ১১৬টি স্কুলের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষার্থীকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। এবারের কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে তিন বছরে উপকূলের ২৫৬টি স্কুলে ১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী সবুজ উপকূল কর্মসূচির আওতায় আসবে।

Post a Comment

0 Comments