6/recent/ticker-posts

নাসরিন ট্রাজেডির ১৪ বছর আজ॥ আদালত ঘোষিত ক্ষতিপূরণের ১৭ কোটি টাকা কবে পাবে ভোলার ক্ষতিগ্রস্তরা



আদিল হোসেন তপু॥ 

আজ ৮ জুলাই নাসরিন ট্রাজেডি দিবস। ২০০৩ সালের এই দিনে আট শতাধিক যাত্রি নিয়ে এমভি নাসরিন-১ লঞ্চ ঢাকা থেকে ভোলার লালমোহনে আসার পথে চাঁপুরের মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় ডুবে যায়। এতে সরকারি হিসাবমতে প্রাণহানি হয় ৩’শত ৯ জনের। সেদিন থেকে ভোলাবাসি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে আসছে। এবার নিরাপদ নৌযান নিশ্চিত করণসহ আদালত ঘোষিত ক্ষতিপূরণের ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা দ্র”ত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে পৌছে দেয়ার দাবি তুলেছেন তারা।  

ভোলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঢাকাসহ সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। এই নৌপথে পুরোনো ঝুকিপূর্ণ লঞ্চ ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রি এবং মালামাল নিয়ে চলাচল করে বিধায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। ভোলাবাসির জন্য এমনই একটি দুর্ঘটনা হচ্ছে এমভি নাসরিন-১ লঞ্চ দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেলার লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলার মানুষ। ওই দুই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে এখনও শোক কাটেনি দুর্ঘটনায় নিহত বা আহতদের পরিবারগুলোতে। সেদিনের কথা মনে পড়লে এখনো আঁতৎকে ওঠেন তারা। পরিবারের উপার্জনাক্ষম সদস্যদের হারিয়ে অভাব অনটনের মধ্যদিয়ে দিন কাটছে অনেকের।

দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরাপদ নৌযান নিশ্চিত করণে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ না করায় এ রুটে কোকো লঞ্চ দুর্ঘটনাসহ আরো কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া দুর্ঘটনার ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্তরা সরকার কর্তৃক জনপ্রতি নামমাত্র  ১৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য ছাড়া কিছুই পায়নি। এ অবস্থায় বাংলাদেশ লিগাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট “ব্লাস্ট” ২০০৪ সালের ৫ জুলাই ঢাকার তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ক্ষতিপূরণের দাবিতে একটি মামলা দায়ের করে। আদালত ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারী নিহত ও নিখোঁজ প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা এবং আহত প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের রায় দেয়। এতে আপত্তি জানিয়ে বিবাদী পক্ষ ওই বছরের ২৪ অক্টোবর মহামান্য হাইকোর্টে রিভিশন মামলা দায়ের করলে মহামান্য হাইকোর্ট এবছরের ৫ জুন তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতের রায় বহাল রাখেন বলে জানিয়েছেন ব্লাস্টের পরিচালক এডভোকেট এসএম রেজাউল করিম।

কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তরা কবে নাগাদ ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি। তবে মামলা দায়েরকারী প্রতিষ্ঠান ব্লাস্টে’র উপদেষ্টা এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নিজামুল হক জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে দ্র”ত ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে পারেন সেজন্য তারা কাজ শুরু করেছেন।

এদিকে আদালতের নির্দেশনা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সে লক্ষ্যে ৬ জুলাই বৃহস্পতিবার ভোলা আইনজীবী সমিতির সম্মেলন কক্ষে ব্লাস্ট লঞ্চ ডুবিতে আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের আইনগত বাধ্যবাধকতা শীর্ষক এক মত বিনিময় সভার আয়োজন করে।

ভোলা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট ওবায়দুর রহমান শাজাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক বিচারপতি নিজামুল হক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ব্লাস্টের পরিচালক এডভোকেট এসএম রেজাউল করিম, সংসদ সদস্য এডভোকেট মমতাজ বেগম, জেলা ও দায়রা জজ জনাব ফেরদৌস আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এনামুল করিম, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আক্তারুজামান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অব্দুল মমিন টুলু। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল হালিম, আইনজীবী সমিতি ভোলার সহ-সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ শাজাহান, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরুল আমিন নুরনবী, ব্লাস্ট সমন্বয়কারী এডভোকেট খলিলুর রহমান, ঢাকা জজ কোটের আইনজীবী এডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত ও দৈনিক দক্ষিণ প্রান্ত পত্রিকার সম্পাদক এডভোকেট নজরুল হক অনুসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিচারক, আইনজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষসহ নাসরিন ট্রাজেডিতে ক্ষতিগ্রস্তরা দ্রুত আদালতের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
copy:

Post a Comment

0 Comments