6/recent/ticker-posts

ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ৯ কিলোমিটার রাস্তা ভেঙে গেছে

ঘটছে দুর্ঘটনা ॥ উল্টে পড়ছে ভারী যান ॥ সৃষ্টি
হয়েছে যানজট ॥ বন্ধ হয়ে যেতে পারে যান চলাচল


ভোলা টুডে রিপোর্ট:

ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রায় ৯ কিলোমিটার রাস্তা ভেঙে গেছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নিম্মমানের কাজ করায় ও ভারী যানবাহন চলাচলের কারনে এ সড়কের অধিকাংশ এলাকায় বড় বড় গর্ত ও নর্দমার সৃষ্টি হয়েছে। গর্তে বৃষ্টির পানি জমে একাকার হয়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই এ সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। উল্টে পড়ছে মালবাহী ভারী ট্রাক। এ সড়ক দিয়ে এখন যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুর রুটে নিয়মিত ফেরি চলাচল না করায় তীব্র জানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে সাধারণ যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক ও পথচারিরা। যে কোন মুহুর্তে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ১৬ জেলার যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ এ রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
রবিবার দুপুরে সরেজমিনে ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের প্রায় ৯ কিলোমিটার রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ওই গর্তে বৃষ্টির পানি জমে যেন নর্দমায় পরিনত হয়েছে। রাস্তার পাশে উল্টে পড়েছে বেশ কয়েকটি মালবাহী ভারী ট্রাক। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দেখা গেছে, ওই সড়কের সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের বেপারী বাড়ির সামনে পুরনো ইট-বালু, খোয়া ও পিচ দিয়ে সড়কের বড় বড় গর্ত ভরাটের চেষ্টা করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মীরা। মিলু মেম্বারের বাড়ির সামনে সড়কের পাশে কাত হয়ে পড়ে রয়েছে একটি ভারী মালবাহী ট্রাক। ট্রাকচালক শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ওরডবোঝাই ট্রাক নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে এসেছিলেন বরিশাল যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু ভাঙা-চোড়া রাস্তার কারনে রডবাহী ট্রাকটি শনিবার রাস্তার পাশে কাত হয়ে পড়ে আটকে গেছে। দুই দিনেও তিনি তার ট্রাকটি উঠাতে পারছেননা। অপর ট্রাকচালক আব্দুল ওদুদ মুন্সী ও সাইদুল ইসলাম জানান, তারা গত ৫ দিন আগে রডবোঝাই ট্রাক নিয়ে চট্ট্রগ্রাম থেকে এসেছেন। যাবেন বরিশাল। কিন্তু রাস্তা খারাপ হওয়ায় যান চলাচল করতে পারছেনা। অন্যদিকে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে নিয়মিত ফেরি চলাচল না করায় ৫ দিন ধরে এ সড়কেই অবস্থান করছেন তারা। এখনো যেতে পারছেননা তাদের গন্তব্যস্থানে।
পূর্ব ইলিশা ইউপি কার্যালয়ের সামনে (হাওলাদার বাড়ির সামনে) রাস্তার পাশে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি লাল নিশানা। জানতে চাওয়া হলে স্থানীয় নছিমনচালক আব্দুর রহিম বলেন, গত ৪ দিন দুইটি মালবাহী ভারী ট্রাক গর্তের ভেতরে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। শনিবারও একইস্থানে গর্তের ভেতরে পড়ে যায় আরো একটি মালবাহী ট্রাক। তাই এই স্থানে লাল নিশানা টাঙিয়ে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
কতদূর যাওয়ার পর রাস্তার পাশে আরো একটি মালবাহী ট্রাক রাস্তার পাশে উল্টে পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে নিয়মিত ফেরি চলাচল না করায় প্রতিদিন শত শত মালবাহী ভারী ট্রাক রাস্তার একপাশে সারিবদ্দ হয়ে রাখা হয়। আর রাস্তার অন্য পাশ দিয়ে ব্যাটারিচালিত অটো রিক্সা, মাইক্রোবাস, মিনিবাস, মোটরসাইকেল, বাই সাইকেল, রিক্সাসহ ছোট ছোট বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। এতে রাস্তাটি ভেঙে যায়। সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ১৬ জেলার যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। রাস্তাটি এখন যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কটি।
ইলিশা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন বলেন, ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের ভোলার ইলিশা অংশের রাস্তাটি এখন যান চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই এ সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ৩ দিনে অন্তত ৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ট্রাকের ক্ষতির পাশাপাশি বহু মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত রাস্তাটি মেরামতের ব্যবস্থা না করা হলে ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি আরো বলেন, গত ২০১৪ সালে ওটিবিএল কম্পাণি এ রাস্তাটি মেরামত করলেও রাস্তাটি কোন দেখবাল করেনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। যার ফলে নিম্মমানের কাজ করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। মাত্র ২ বছরের মাথায় নষ্ট হয়ে যায় রাস্তাটি। এ ছাড়া বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে ফেরি চালাচ্ছেনা। তারা প্রতিদিন অন্তত চারটি ট্রিফ দেওয়ার কথা থাকলেও ট্রিফ দিচ্ছে মাত্র একটি। এতে ভারী যানবাহনগুলো রাস্তার অপরে দিনের পর দিন অপেক্ষমান থাকে। এ অবস্থায় মহাসড়কটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।
এ ব্যাপারে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরির ব্যবস্থাপক আবু আলম হাওলাদার বলেন, এ রুটে কৃষানী, কনকচাঁপা ও কুসুমকলী নামের তিনটি ফেরি চলাচল করছিল। কিন্তু ফেরি কৃষানী গত ১০ জুলাই নষ্ট হয়ে যায়। এখন দুইটি ফেরি নিয়মিত চলাচল করছে। তাই যথাসময়ে ফেরি আসা-যাওয়া করতে পারছেনা। একটু বিলম্ব হচ্ছে। যানবাহন কিছু বাড়ার কারনে অপেক্ষমান থাকে। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আগামী মাসে আরো একটি ফেরি আসবে। তখন হয়তো যানজট কমে যাবে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারে বিআরটিসির কোন গাফিলতি নেই কিংবা দায়ী নয় উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, রাস্তাটি অনেক দুর্বল। তাই রাস্তার সাইটগুলো ভেঙে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ইলিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসনাইন আহমেদ হাসান বলেন, ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের ভোলার ইলিশা অংশের প্রায় ৯ কিলোমিটার রাস্তাটি টেকসই রাস্তা না করায় রাস্তাটি ভেঙে গেছে। এখন এ রাস্তায় যান চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে রাস্তাটি টেকসই রাস্তা করারও দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ভোলার নির্বাহি প্রকৌশলী এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমি এখন ট্রেণিংয়ে আছি। তিনি উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ভোলার উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল হোসেন সোমবার বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রম, খুলনা, বরিশালসহ দূর-দূরান্ত থেকে ভারী যানবাহন এসে ওই সড়কের পাশে সারিবদ্দভাবে লম্বা লাইন দিয়ে দারিয়ে থেকে পার্কিং করে রাখছে কয়েকদিন ধরে। এরই মধ্যে সম্প্রতি কয়েকদিন ধরে ভারী বর্ষণে রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী করার জন্য ক্ষুদ্র মেরামতের চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, রাস্তার প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকায় পিএমপি’র প্রায় ১২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেটা অনুমোদন হলে রাস্তার কাজ শুরু করা হবে।

Post a Comment

0 Comments