বাঘমারা সেতু উদ্বোধন: ভোলা-পটুয়াখালীর মানুষ এখন সেতুবন্ধনে



ভোলা টুডে ডেস্ক:
ভোলার বাঘমারা ব্রিজটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে অবশেষে ভোলা ও পটুয়াখালী জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধনের সৃষ্টি হলো। দুই জেলার সংযোগকারী বাঘমারা নদীর ওপর প্রায় দেড় হাজার ফুট দীর্ঘ্য ভোলাবাসীর স্বপ্নের বাঘমারা সেতু (বাঘমারা ব্রিজ) রবিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বাধন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ভোলা ও পটুয়াখালী জেলার মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধনের সৃষ্টি হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি ও স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন উৎসবমুখর পরিবেশে ব্রিজটি উদ্বোধন করেন। ব্রিজ উদ্বোধনকালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেন, বিশ্বে মন্দাভাব থাকা স্বত্ত্বেও রপ্তানির কোন প্রভাব পড়বে না। কারন, দেশে পণ্য রপ্তানির হার নির্ধারন করা হয়েছে ৪১ বিলিয়ন ডলার। দেশে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তাই আগামীতে যে কোন সময়ের চেয়ে রপ্তানির হার বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরো বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছে তারা হাওয়া ভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীকেও হত্যা করার চেষ্টা করেছিলো। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এ সময় মন্ত্রী আগামী নির্বাচনে ভোলার চারটি আসনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।
এ সময় সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জামাতা প্রকৌশলী মাশরুর হোসেন মিতু, ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মমিন টুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লব প্রমূখ বক্তৃতা করেন।
ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী, দক্ষিণ দিঘলদী, চর সামাইয়া, ভেদুরিয়া ও ভেলুমিয়া ইউনিয়নবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিল বাঘমারা খেয়ার স্থানে বাঘমারা সেতু স্থাপনের। ভোলার বাংলাবাজার-বাঘমারা-শরীফখা-ভেলুমিয়া-ব্যাংকেরহাট সড়কটি অপরিপূর্ন ছিল একটিমাত্র সেতুর জন্য। এ ছাড়া ভোলা ও পটুয়াখালী জেলার সঙ্গে সেতুবন্ধনের বাধা ছিল বাঘমারা সেতু। এ সেতু পার হয়ে মাত্র এক ঘন্টায় ভোলা থেকে পটুয়াখালী যাতায়াত করা যায়।
জানা যায়, ২০১০ সালে ভোলা সদর আসনের সংসদ সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ সেতু বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। ২০১২ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বৃহত্তর বরিশাল জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সেতুটি অনুমোদন করা হয়।
ভোলা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাখাওয়াত হোসেন জানান, ৪৪০ মিটার  (১৪৪৫ ফুট) দীর্ঘ্য ও ৭ মিটার (২৩ ফুট) প্রস্থর এই প্রি-স্ট্রেচ গার্ডার সেতু নির্মানে ব্যয় হয়েছে ৪২ কোটি ১১ লাখ টাকা। সেতুর পূর্ব পার্শে রয়েছে ১২০ মিটার আর পশ্চিম পাশে রয়েছে ৩৬০ মিটার এপ্রোচ সড়ক। তিনি আরো জানান, কয়েক মাস আগে ভোলাবাসীর স্বপ্নের বাঘমারা সেতু নির্মান কাজ সম্পুর্ন শেষ হয়েছে। ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কনষ্ট্রাকশন লিঃ সেতুটি নির্মান করে।
সরজমিনে সেতুর ওপর গিয়ে দেখা যায়, মানুষের উচ্ছাস। স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন বিকেলে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সী হাজার হাজার মানুষ এ ব্রিজে ঘুড়তে আসে। উপভোগ করেন নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য। গ্রহন করেন নির্মল বাতাস। স্থানীয়দের কাছে এ ব্রিজটি একটি দর্শণীয় স্পট হিসেবেও পরিচিতি হয়ে ওঠেছে। দর্শনার্থীদের আগমনকে ঘিরে সেখানে গড়ে ওঠেছে বিভিন্ন দোকান-পাট। যেন পসরা বসেছে ভ্রাম্যমান দোকানেরও। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ মোফাজ্জল হোসেন, মোঃ তরিকুল ও জাকির খা জানান, বাঘমারা সেতু এ অঞ্চলের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যপক ভুমিকা রাখবে। বিশেষ করে কৃষকের উৎপাদিত পন্য পরিবহনে সহজ হয়েছে। এখানকার শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সহজ হওয়ার কারনে তারা এখন ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারবে।
পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কালাইয়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, পটুয়াখালী জেলার অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ ভোলা জেলায় বসবাস ও চাকুরী করছেন। এ সেতু নির্মানের ফলে তাদের যাতায়াতে অন্তত দু’ঘন্টা সময় বাচিয়ে দিয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন