6/recent/ticker-posts

ভোলার ভেদুরিয়ায় একটি অনুসন্ধান কূপে গ্যাস পাওয়ার আশা জেগেছে


এম শাহরিয়ার জিলন॥
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ভোলার ভেদুরিয়ায় একটি অনুসন্ধান কূপে গ্যাস পাওয়ার আশা জেগেছে। রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তা বলছেন, প্রাথমিক পরীক্ষায় ভোলা নর্থ-১ নামের ওই কূপে গ্যাস আছে বলেই তাদের মনে হচ্ছে। তবে স্পষ্ট চিত্র পেতে আরও কিছু পরীক্ষা তাদের করতে হবে। জ্বালানি সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভেদুরিয়ায় গ্যাস পাওয়া গেলে এটি হতে দেশের নতুন একটি গ্যাসক্ষেত্র। নতুন এই গ্যাসক্ষেত্রের সম্ভাবনা নিয়ে সোমবার (১৫ জানুয়ারী) মন্ত্রিসভার বৈঠকেও আলোচনা হয়।


গতবছর শেষ দিকে ভোলায় বাপেকসের নতুন গ্যাসক্ষেত্রে ‘শাহবাজপুর ইস্ট-১’ থেকে পরীক্ষামূলক উত্তোলন শুরুর প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, “এর আগেও আপনাদের বলেছিলাম, ভোলায় আমরা গ্যাস পেয়েছি।
“নতুন আরেকটা কূপ খনন করে সেখানেও প্রায় ৬০০ বিসিএফ (বিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস আবিস্কৃত হয়েছে। ভোলায় মজুদ এক দশমিক পাঁচ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট)”।

পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, নতুন ওই ক্ষেত্রে ৬০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে আশা করা হচ্ছে। এটি হবে দেশের ২৭তম গ্যাসক্ষেত্র। সেখানে খনন করা হলে আরও গ্যাস পাওয়া যাবে বলে সরকার আশা করছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভোলায় গ্যাসের সন্ধানে আরও কূপ খননের ওপর গুরুত্ব দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দ্বীপজেলা ভোলায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে সেখানে এই গ্যাস ব্যবহার করা যায়। প্রয়োজনে পাইপলাইনের মাধ্যমেও ওই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিয়ে আসা যায়।
ভোলায় প্রথম গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায় শাহবাজপুর ক্ষেত্রে। সেখানে ২০০৯ সালের ১১ মে উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স।

শাহবাজাপুরে ৩৫ বিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে বাপেকসের প্রকৌশলীদের ধারণা। সেখানে থাকা চারটি কূপের মধ্যে তিনটি থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তোলা হচ্ছে।
গতবছরের অক্টোবরে ওই গ্যাসক্ষেত্রের পাশেই নতুন আরেকটি গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া যায়, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘শাহবাজপুর ইস্ট-১’।

এই ক্ষেত্রে ৭২০ বিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাসের মজুদ রয়েছে বলে বাপেকসের কর্মকর্তাদের ধারণা। নভেম্বরে ওই কূপ থেকে পরীক্ষামূলক উত্তোলনও শুরু হয়েছে।
শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. হাসানুজ্জামান জানান, ভোলা সদরের ভেদুরিয়ায় বাপেকসের ভোলা নর্থ-১ অনুসন্ধান কূপে গত ডিসেম্বরে খনন শুরু করেছিলেন তারা।
“এ পর্যন্ত যে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাতে মনে হচ্ছে সেখানে গ্যাস আছে। তবে আরও কিছু পরীক্ষা করলে নিশ্চিতভাবে পরিমাণ বলা যাবে। সেজন্য কয়েক দিন সময় লাগবে। ”

রাষ্ট্রায়ত্ব তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশের পুরনো ২৬টি গ্যাস ক্ষেত্রে ২০১৬ সালে পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত প্রমানিত গ্যাসের মজুদ ছিল ১৩ দশমিক ৬০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।
গ্যাস সঙ্কটের মধ্যে গত কয়েকবছরে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে উত্তোলন বাড়িয়ে দৈনিক ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সারাদেশে দৈনিক চাহিদা রয়েছে তিন হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের।
চাহিদা মেটানোর জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র থেকে অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। স্থল, অগভীর ও গভীর সমুদ্রে দেশি-বিদেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অনুসন্ধান চালাচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানির লক্ষ্যে একাধিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজও চলছে।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং বাসাবাড়ি মিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ গ্রাহককে গ্যাস দিতে হয়।
উৎপাদিত গ্যাসের ৪২ শতাংশ যায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে; ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করা হয় ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। আর ১৭ শতাংশ গ্যাস শিল্প কারখানায়, ১১ শতাংশ আবাসিক সংযোগে, ৭ শতাংশ সার কারখানায় এবং ৬ শতাংশ গ্যাস যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

Post a Comment

0 Comments