6/recent/ticker-posts

নাজিমের মৃত্যু কোন দুর্ঘটনা নয়,হত্যাঃ--সালেহ্ রনক।।


সালেহ্ রনক।।
মানবতাবোধ বিবর্জিত অসাড় সময়ে বড় অসহায় মানুষজন্ম। জীবন অনেক বড়, কিন্তু সে তো সবার জন্য নয়! যে জীবন প্রস্ফুটিত হবার কালেই ঝরে গেল,ডালে ডালে, শাখায় শাখায়,পত্রপল্লবিত হওয়ার কালে, পাখির কিচির মিচির মুগ্ধ জীবন হঠাৎ যখন স্তব্ধ হয়ে যায়,সেই সুনশান নিরবতা বড় ভয়ংকর। সেই অতৃপ্ত আত্মা কোলাহলের মাঝেও তাড়িয়ে বেড়ায়, জীবনের কৈফিয়ত চায়। গুটিসুটি মেরে লুকিয়ে পড়ি শামুকের খোলস বদ্ধ জীবনে, তবুও সেই গোঙানীর শব্দ পিছু ছাড়ে না।



দুই বাসের প্রতিযোগিতায়, চাকার তলায় পিষ্ট হলো নাজিম নামের যে জীবন, যন্ত্রণাবিদ্ধ সেই ক্ষণজন্ম কি জীবন নামের প্রহসন নয় ? আক্ষেপ নয়? সেই আক্ষেপ গোঙানীর শব্দ হয়ে কড়া নাড়ছে আজ, বিবেকের জঙ ধরা বন্ধ দরজায়। আপনি, আমি শুনতে পাচ্ছিতো সে গোঙানীর শব্দ??? অসময় মৃত্যুর আগে কাঁচা প্রাণ ছিঁড়ে নেয়ার বিভৎস আর্তনাদ আমাদের বোধহীন অন্তরে স্পর্শ করে না। প্রকৃতি শুন্যতা ভালোবাসে না, আমরাও। তাই প্রিয় হাতগুলো ছিঁড়ে যায়, পা গুলো পিষ্ট হয়, চাকার তলায় জীবনের আকুতিও চাপা পড়ে, তবু পরদিন সকাল হয়, গতদিনের রক্ত, কান্না, কফিন কর্পূরের তাজা ঘ্রাণ জলের সংস্পর্শে নিমেষেই মুছে যায়। কালের তালে তালে ঘুম-পাড়ানিয়া গানের মত বিস্মরণীয় গান গেয়ে মানুষের দুঃখের স্মৃতি ভুলিয়ে দেয় বসুন্ধরা। আমরাও দিনে দিনে নাজিমের শোক কতকটা ভুলব। দিনের সঙ্গে সঙ্গে নাজিমের স্ত্রী,সন্তান, পরিজন চোখের জল মুছবে,ধীরে ধীরে ব্যস্ত হয়ে পড়বে জীবনের ব্যস্ততায়। আর এভাবেই অপমৃত্যুগুলো চাপা পড়ে যায়, হত্যার দাবী তীব্রতা হারায়, ঘাতকরা পার পেয়ে গিয়ে নতুন করে হত্যায় উৎসাহিত হয়।

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আইনের দুর্বলতায় খুনীরা জামিনে বেরিয়ে আসছে স্বাভাবিক জীবনে। এই ধারা চলতে থাকলে লাশের লাইনই শুধু দীর্ঘ হবে। সকলের সম্মিলিত তীব্র ও কার্যকরী আন্দোলনই পারে কর্তা ব্যক্তিদের কঠোর আইন প্রনয়ণে বাধ্য করতে।

নাজিম হত্যার বিচার চাই।ব্যক্তির হাহাকার সমষ্টির হাহাকারে পরিনত না হলে তীব্র আন্দোলন সংঘটিত হবে না। বেঁচে থাকলেই না "কোটা সংস্কার","চাকরীর স্হায়ীকরণ","রাজস্ব খাত ","এমপিও ভুক্তি","ক্ষমতার পালা বদল "। এসবের আবেদন কি জীবনে চেয়েও বেশী?তাই বেঁচে থাকার আন্দোলনটাই মূখ্য নয় কি?আমরা নিজেদের চাওয়া পাওয়ার ক্ষেত্রে সোচ্চার হই, জাতির বৃহত্তর কল্যাণে ততটা নই। আজ আমি যে বেদনায় লীন, কাল সে কাতারে আপনিও থাকবেন গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকার গ্যারান্টি এই সমাজ নাই বা দিল, স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়ার সুযোগ না দেই।

চলুন আজ আর অন্য কোন দাবী দাওয়াও নয় নিশ্চিতে নিঃশ্বাস নেয়ার অধিকারটুকু ছিনিয়ে নেয়ার দাবীতে ঐক্যবদ্ধ হই।বিবেকবোধহীন সমাজ আর রাষ্ট্রের অকার্যকর নিয়মনীতির জঙ ধরা দরজায় সমূলে করাঘাত করি। বেঁচে থাকার আন্দোলনই হোক প্রথম ও প্রধান, বেঁচে থাকলেই পরিপূর্ণতা পাবে বাকি সকল দাবী।

আমিই যদি জনগণ হই তবে গণপ্রজাতন্ত্রী এই দেশে আমিই একটি আন্দোলনের নাম।
এবং রাষ্ট্রযন্ত্র,
তুমি আমার নিরাপত্তা দিতে বাধ্য।

লেখক: সালেহ্ রনক
সমাজ কর্মী, শিক্ষক, চেয়ারম্যান, অপরাজিতা ফাউন্ডেশন
১৯এপ্রিল ২০১৮
ঢাকা



Post a Comment

0 Comments