6/recent/ticker-posts

খেজুর রসের স্বাদ ভুলতে বসেছে ভোলার মানুষ সরকারী উদ্যোগে রাস্তার পাশে খেজুর গাছ লাগানোর দাবী


এম শাহরিয়ার জিলন ॥
খেজুর রসের স্বাদ ভুলতে বসেছে ভোলার মানুষ। বাজারে পাওয়া যায়না খেজুর গুড়ের মনমাতানো সেই ঘ্রাণ। ভোলার পল্লী এলাকায় শিশির ভেজা ভোরে শিয়ালীদের (খেজুর রস বিক্রেতা) হাক-ডাক এখন আর শোনা যায়না। ইটের ভাটায় অবাধে খেজুর গাছ পোড়ানোর ফলেই খেজুর রস বিলুপ্ত হতে চলছে বলে ভোলার মানুষ মনে করছে।


দ্বীপ জেলা ভোলার শীতের ঐতিহ্য ছিল মিষ্টি খেজুর রস। মাত্র এক যুগের মাথায় খেজুর রসের স্বাদ ভুলতে বসেছে ভোলার মানুষ। রসের পায়েস এখন শুধুই স্মৃতি। ১২-১৪ বছর আগে শীতের সকালে ভোলার পল্লী এলাকায় মানুষের ঘুম ভাঙত শিয়ালীর (রস বিক্রেতা) হাক-ডাকে। এখন আর সেই ডাক শুনতে পাওয়া যায় না। শীতে গ্রাম্য হাটে খেজুর গুড়ের সেই মনমাতানো ঘ্রাণ এখন আর পাওয়া যায় না। যশোর এলাকা থেকে আসা চিনি মেশানো ভেজাল নিম্মমনের ঝোলা গুড় ভোলার বাজারে বিক্রি হচ্ছে খেজুর গুড় হিসেবে। সেই ভেজাল গুড়ে রসনা তৃপ্ত করছেন ভোলার মানুষ।

এক সময়ে ভোলার অধিকাংশ কৃষকই তার কৃষি উৎপাদনের পাশাপাশি জমির আইলে বেড়ে ওঠা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে শীতের মৌসুমে বাড়তি রোজগার করত। বিশেষ কৌশলে খেজুর গাছ থেকে যারা রস সংগ্রহ করতেন তাদেরকে স্থানীয় ভাষায় বলা হত শিয়ালী। রস সংগ্রহের জন্য কার্তিক মাস থেকেই শুরু হত প্রস্তুতি। অগ্রহায়নের শুরু থেকে নিয়মিত রস সংগ্রহ করা হতো।
শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে রসের স্বাদ বেড়ে যেত। চৈত্রের মাঝামাঝি পর্যন্ত রস পাওয়া যেত। শীতের রাতে চুরি করে খেজুর রস খাওয়ার শৈশব স্মৃতি এখনো মনে করেন অনেকে।
একটি এনজিওর হিসাব অনুযায়ী ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত জেলায় লক্ষাধীক খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হতো। রস দিয়ে পিঠে, পায়েশ খাওয়ার পাশাপাশি দেড়‘শ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন করা হতো।
১৯৯৪ সালে ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ করে খেজুর গাছ ও বাশের মোতা পোড়ানোর অনুমতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়। বাশের মোতা না থাকায় ভোলার সকল ইট ভাটায় পোড়ানোর জন্য খেজুর গাছ নিধন শুরু হয়। কম দামে অধিকাংশ খেজুর গাছ ইট ভাটার বলি হয়। গত এক এক যুগে ক্রমেই খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারনে খেজুর রস কমতে থাকে। ক্রমান্বয়ে এখন তা বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
ভোলার ইলিশা এলাকার শিয়ালী রুহুল আমীন জানান, আগে তিনি শীত মৌসুমে ৭০টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতেন। সংগ্রহীত রস দিয়ে পিঠে, পায়েশ খাওয়ার পাশাপাশি গুড় তৈরী করে বছরে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করতেন। কিন্তু এখন সেই খেজুর গাছ নেই। অধিকাংশ গাছ কেটে জমি অন্য কাজে ব্যবহার করেছেন। মাত্র ৪টি গাছ বেঁচে আছে তা থেকে এখন আর রস সংগ্রহ করা হয়না।
ভোলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আলহাজ্ব মু.শওকাত হোসেন বলেন, জানান, খেজুর গাছ পরিবেশ ও ভূমি রক্ষা রোধে খুব উপকারী। আমরা আমাদের সামান্য স্বার্থে উপকারী গাছটিকে নিধন করে পক্ষান্তরে আমাদেরই ক্ষতি করছি। পরিবেশ রক্ষায় এবং রসের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারী উদ্যোগে রাস্তার পাশে খেজুর গাছ লাগানোর দাবী জানান তিনি।

Post a Comment

0 Comments